টিকিট-গুজব নস্যাৎ সিএবির, পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি জোরালো
সিএবির পদাধিকারী থেকে কমিটি সদস্যদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগপত্র জমা পড়ছে ওম্বুডসম্যানের কাছে। তার মধ্যেই এবার প্রশ্ন উঠে গেল সিএবির ম্যাচ পর্যবেক্ষক যশোবন্ত বিশ্বাস সম্পর্কে। একজন পর্যবেক্ষক হয়ে তিনি নানাভাবে সিএবির বিরুদ্ধাচরণ কীভাবে করতে পারেন, উদ্দেশ্য কী, এর পিছনে আর্থিক লেনদেন জড়িত কিনা তা নিয়েই সংশয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ মরশুমে মহমেডান স্পোর্টিং-টাউন ক্লাব ম্যাচে গড়াপেটা হয় বলে অভিযোগ। প্রহসন দেখে দুই ক্লাবকে শোকজ করে সিএবি। বিষয়টি গিয়েছে ওম্বুডসম্যানের কাছে। বেশ কয়েকটি শুনানি হয়েছে। ম্যাচ রেফারি, পর্যবেক্ষক, আম্পায়ারদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হয়েছে। সব পক্ষের মতামত শোনা হয়েছে। সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম থেকেই এই ম্যাচটি নিয়ে হওয়া বিতর্কে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন। সিএবি সূত্রে খবর, ওই ম্যাচে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়ে সংশয় থাকায় আজ অবধি তাঁকে কোনও ম্যাচ দেওয়া হয়নি। তবে বছর দেড়েক হতে চললেও ওম্বুডসম্যানের দরবারে এই বিষয়টির নিষ্পত্তিও হয়নি। সিএবির অনেকেই চাইছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে বার্ষিক সাধারণ সভার আগেই সত্য উদ্ঘাটিত হোক, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হোক।ওই ম্যাচেও টাউন ক্লাবের কর্তা তথা সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছিল সিএবিতে। সম্প্রতি এই দেবব্রত দাসের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগ উঠছে। যার শুনানি চালাচ্ছেন ওম্বুডসম্যান। আর এখানেই বিষয়টিতে অন্য মাত্রা যোগ হয়েছে।ওই বিতর্কিত ম্যাচ নিয়ে যেখানে পর্যবেক্ষক ক্লিনচিট পাননি সেখানে তিনি কীভাবে অভিযুক্ত ক্লাবের অভিযুক্ত কর্তার হয়ে সওয়াল করতে পারেন সেই প্রশ্ন উঠছে। দেবব্রত দাসের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে যশোবন্ত যে তাঁর হয়ে ব্যাট ধরেছেন তার স্ক্রিনশট জমা পড়েছে সিএবিতে। এই অবস্থায় এসপার-ওসপার চাইছেন সিএবির অনেকেই। যশোবন্ত নানাভাবে যে সিএবি বিরোধিতা চালাচ্ছেন তাও নজরে রয়েছে সিএবির। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল অডিওতে (যার সত্যতা যাচাই করেনি জনতার কথা) সিএবি সভাপতি সম্পর্কে ছাপার অযোগ্য ভাষা প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে যশোবন্তর বিরুদ্ধে। বর্তমানে সিএবিতে তথাকথিত বিরোধী লবির গর্বিত সৈনিক বলে দাবি করে যশোবন্ত সাংবাদিকদের ভুয়ো তথ্য দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ এবং সেগুলি ফলাও করে পোস্ট করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকী আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে সিএবির নির্বাচনে কাঁটা ছড়ানোর হুঁশিয়ারিও তিনি দিচ্ছেন বলেও সিএবি কর্তারা জানতে পেরেছেন। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বললেন, ওঁর পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্যতা আছে কি? আর উনি কী বলছেন তাতে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না সিএবির বার্ষিক সাধারণ সভায়, এমনকী নির্বাচন হলে তাতেও। স্বার্থসিদ্ধির জন্য এক পক্ষের পাত্তা না পেয়ে খানিকটা নিজে উদ্যোগী হয়েই অপর পক্ষের ঘনিষ্ঠ হয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা ছাড়া এ সব কিছু নয়। আর সাংবাদিকদের অবস্থা এত খারাপ হয়নি যে ওঁর কথা শুনে ভিত্তিহীন, একপেশে বা নেতিবাচক খবর করে নিজেরা বিপাকে পড়বেন। তবে এটাও ঠিক, মহমেডান-টাউন ম্যাচের তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা বরদাস্ত করা উচিত নয়। ভিনরাজ্যের ক্রিকেটার খেলানো নিয়ে টাউনের আপত্তি বা অভিযোগ জমার কথা পর্যবেক্ষক মহমেডানকে আগেভাগে জানিয়েছিলেন কিনা বা গড়াপেটায় তাঁর কী ভূমিকা, আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হোক। সিএবিতে জমা দেওয়া তাঁর রিপোর্ট আদৌ কতটা বিশ্বাসযোগ্য, যশোবন্তের সাম্প্রতিক আচরণ বা অবস্থান দেখে তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকছেই। একদা যিনি দেবব্রতর সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন মহলে, তিনিই আবার কেন দেবব্রতকে নিয়ে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন, কোনওভাবে বাঁচার জন্যে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্ন তোলা হবে সিএবি সভাপতির কাছেও।এদিকে, গতকাল রটে গিয়েছিল সিএবি নাকি সংবিধান সংশোধন করে বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার ও সদস্যদের ম্যাচ টিকিট দেওয়া বন্ধ করতে চাইছে। যদিও এটি গুজব। সিএবি সভাপতি জানিয়েছেন, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ হোক বা আইপিএল, যাঁর জন্য যতগুলি করে টিকিট বরাদ্দ তাই দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে আইসিসি ইভেন্ট, দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, যে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা আইপিএলেও সেই ধারা বজায় থাকবে। ফলে গুজবে কান দেবেন না।ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সংবিধান সংশোধনের যে চিঠি সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়বে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মুদ্রণ প্রমাদ-সহ খসড়া চিঠির কপি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই, কিছু মহলে বার্ষিক সাধারণ সভার আগে অসন্তোষ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়েই। এতে সিএবিতেই ঘুঘুর বাসা আছে কিনা তা নিয়েও খোঁজ চলছে বলে জানা গিয়েছে।